নরসিংদীতে প্রবাসী এক যুবককে প্রেম ও বিয়ের ফাঁদে ফেলে অপহরণের পর মুক্তিপণ দাবির ঘটনায় চারজনকে আটক করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
গতকাল শুক্রবার রাতে নরসিংদী সদর থানার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।
আটককৃতরা হলেন-প্রবাসীর স্ত্রী মারিয়া আক্তার মন্টি (২৩), তার সাবেক প্রেমিক মো. অভিত মিয়া (২৮), মন্টির বড় ভাই মো. পাপ্পু মিয়া (২৮) ও বাবা মো. বাদল মিয়া (৫৮)।
advertisement
ভুক্তভোগী ব্যক্তির নাম রাসেল হাসান (২৮)। তার গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলায়। তিনি অবসরপ্রাপ্ত এক সরকারি কর্মকর্তার ছেলে। তার শ্বশুরবাড়ি নরসিংদীতে।
আজ শনিবার দুপুরে সিদ্ধিরগঞ্জে র্যাব-১১-এর কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, সৌদি প্রবাসী রাসেল তিন মাসের ছুটিতে দেশে এসেছিলেন। বিদেশে থাকাকালীন তার মো. বাদল মিয়া ব্যবসা করার কথা বলে তার কাছ থেকে ২ লাখ টাকা ধার নেন। তিনি দেশে ফেরার পর পাওনা টাকা ফেরত চাইলে শ্বশুর তালবাহানা করতে থাকেন।
পরে তার স্ত্রী মন্টির সহায়তায় রাসেলসহ তার পরিবারের সদস্যদের নামে মিথ্যা মামলা করেন। জামিনে বেরিয়ে এলে রাসেলকে বিষয়টি মীমাংসার কথা বলা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর রাসেলকে নিজেদের এলাকায় ডেকে নেয় শ্বশুরবাড়ির লোকজন। এ সময় তারা ভুয়া পুলিশ সেজে গ্রেপ্তারের নামে অপহরণ করে রাসেলকে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরও জানান, অপহরণের পর রাসেলকে নির্যাতন করা হয়। তার বড় শ্যালক পাপ্পু ও তার বন্ধুরা ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে রাসেলের কাছে। তবে রাসেল চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এতে তাকে পাপ্পু ও তার বন্ধুরা শ্বশুর বাদলের নির্দেশে আবারও নির্যাতন করেন। নির্যাতনের এক পর্যায়ে রাসেলকে বিবস্ত্র করে তার পুরুষাঙ্গে আগুন ধরিয়ে দেয় তারা। অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র হাতে দিয়ে ছবি তোলে এবং তা মোবাইলে ভিডিও ধারণ করেন।
পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও জানান, রাসেলের ওপর নির্যাতনের ভিডিও তার মাকে পাঠিয়ে ব্ল্যাকমেইল করা হয়। আইনের সহায়তা না নেওয়ার জন্য হুমকিও দেন তারা। এ ঘটনায় তার মা হৃদরোগে আক্রান্ত হয় বলে র্যাবকে জানায় রাসেল।
একপর্যায়ে রাসেল কৌশলে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে আসেন। পরে নরসিংদী মডেল থানায় মামলা করতে গেলে অস্ত্র হাতে তোলা তার ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন প্রতিপক্ষরা। ফলে মামলা না করেই ফেরত আসেন রাসেল।
অপহরণ ও মুক্তিপণ দাবির চক্রের মূলহোতা তার স্ত্রী মন্টি। প্রতারণার জন্য এ পর্যন্ত সে অন্তত ৮ থেকে ১০টি বিয়ে করেছেন। আটককৃতদের বিষয়ে আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানিয়েছে র্যাব।
প্রসঙ্গত, নির্যাতন ও অপহরণের ঘটনায় গত বুধবার র্যাব-১১ সদর দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেন রাসেল। অভিযোগে রাসেল জানান, ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর পরিবারকে না জানিয়ে মন্টি আক্তার নামে এক তরুণীকে বিয়ে করেন তিনি। পরে ২০১৯ সালের ১৯ জানুয়ারি চাকরি নিয়ে সৌদি আরবে চলে যান রাসেল। বিদেশ গিয়ে বাবা আবদুল হককে বিয়ের কথা জানান তিনি। পরে পুত্রবধূ মন্টিকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান রাসেলের মা-বাবা।
ভুক্তভোগী যুবকের অভিযোগ, গত বছরের এপ্রিল মাসে দেশে ফেরেন রাসেল। এক মাস দেশে থাকার পর মে মাসে আবার সৌদি আরব চলে যান তিনি। সৌদি আরব যাওয়ার পর রাসেলকে তার স্ত্রী মন্টি জানান, তিনি অন্তঃসত্ত্বা। কিন্তু রাসেলের মা-বাবা জানান, মন্টি তাদের না জানিয়ে নরসিংদীতে তার বাবার বাড়ি চলে গেছেন। যাওয়ার সময় গয়না, মোবাইল ফোন নিয়ে গেছেন মন্টি।
এ খবর পেয়ে রাসেল গত ১৩ সেপ্টেম্বর আবার দেশে আসেন। মন্টির বাড়িতে গিয়ে জানতে পারেন, তার গর্ভপাত হয়েছে। এর চার দিন পর নরসিংদী সদর থানায় রাসেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন মন্টি আক্তার।
পাঠকের মতামত: